শরৎকালে যখন সাদা কাশফুল আর আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায়, জানান দেয় দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। শরৎকালে এই পূজা হয় বলে এর নাম শারদীয় দুর্গাপূজা। শরৎকালে দুর্গাপূজার সূচনা হয় মূলত রামায়ণের কাহিনিকে অবলম্বন করে। ত্রেতা যুগে রাক্ষস রাজা রাবণকে বধ ও সীতাকে উদ্ধারের জন্য রামচন্দ্র শরৎকালে (অকালে) দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। অকালে হয়েছিল বলেই এর আরেক নাম অকালবোধন।
বিভিন্ন সংগঠন তাদের মতো করে দেবী দুর্গাকে বরণ করার প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। আবাহনও তাদের মত একটি সংগঠন।
আবাহন দুর্গা পূজা সংগঠনটি ১৯৭৯ সালে গঠিত হয়েছিল। সংগঠনটি বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার ফরেস্ট অফিস রোডে অবস্থিত। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হল সারা বছর ধরে বাঙালি হিন্দু সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠানের প্রচার ও উদযাপন করা এবং আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মের সমৃদ্ধ, রঙিন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখা। সেই ১৯৭৯ সাল থেকে, আবাহন পূজা সমিতি দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা ও কালীপূজা উদযাপনের প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমরা আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সংস্পর্শে থাকি। প্রথম দিকে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র গুটিকয়েক লোক নিয়ে কিন্তু সকলের আশীর্বাদ এবং ভালবাসায় আবাহন এখন একটি অনেক বড় সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
আবাহনের এই দুর্গাপূজা আয়োজনে যোগদান করুন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুন এবং আসুন আমরা আবাহন দুর্গা পূজা সমিতিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুগান্তকারী সংস্থা হিসাবে গড়ে তুলি, যা বাংলাদেশের বাঙালির মানসিক ও সাংস্কৃতিক প্রয়োজন মেটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শারদীয় দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব। আমরা এটিকে আনন্দ, শৈলীতে এবং শ্রেণিতে উদযাপন করি। এই দীর্ঘ পূজা উদযাপনের সময়, আমরা সব হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সবার সাথে একটি দৃঢ় বন্ধন তৈরি করি। জগজ্জননী দেবী দুর্গার আগমনে আমাদের সবার দুঃখ, কষ্ট, হিংসা, দ্বেষ দূর হোক। পরাজিত হোক সব অশুভ শক্তির। সবার দেহ ও মনে ছড়িয়ে পড়ুক পবিত্রতা। সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক শান্তি ও সুখের বারতা। সত্য-সুন্দরের আলোয় আলোকিত হোক পৃথিবী। এই হোক আমাদের সবার কামনা।
মহালয়া | ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ইং, শনিবার |
মহাষষ্ঠী | ২০ অক্টোবর ২০২৩ ইং, শুক্রবার |
মহাসপ্তমী | ২১ অক্টোবর ২০২৩ ইং, শনিবার |
মহাষ্টমী | ২২ অক্টোবর ২০২৩ ইং, রবিবার |
মহানবমী | ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ইং, সোমবার |
মহাদশমী | ২৪ অক্টোবর ২০২৩ ইং, মঙ্গলবার |
মহালক্ষ্মী পূজা | ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ইং, শনিবার |
শ্রীশ্রী কালীপূজা | ১২ নভেম্বর ২০২৩ ইং, রবিবার |
আবাহন পূজামণ্ডপ কোন ব্যাক্তিবর্গের পূজা নয়। এটি সকল হিন্দু জনগোষ্ঠীর পূজা। আপনাদের সবার সাহায্য সহযোগিতার কারণে আবাহন পরিবার আজ এতদূর এগিয়ে এসেছে। আশাকরি আগামী দিনগুলোতেও আপনারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আপনাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবেন।
দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। আশ্বিন এবং চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের তিথিতে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী পূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি, তাই এই পূজা বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল সহ বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বাসন্তী পূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ এই কারনে এর জনপ্রিয়তা কম। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় “দেবীপক্ষ”। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটিকে বলা হয় মহালয়া, এই দিন হিন্দুরা পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ, শ্রাদ্ধ করে তাঁদের আত্মার শান্তি কমনা করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা। এই দিন হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। কোথাও কোথাও পনেরো দিন ধরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। মহালয়ার আগের নবমী তিথি থেকে পূজা শুরু হয়। সাধারণত আশ্বিন মাসে বা অনেক সময় কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথি থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা থাকে। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে “দুর্গাষষ্ঠী”, “মহাসপ্তমী”, “মহাষ্টমী”, “মহানবমী” ও “বিজয়াদশমী” নামে পরিচিত। ষষ্ঠীতিথিতে দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে পুজার সূচনা হয় এবং সপ্তমী, অষ্টমী ও নমবী তিথিতে মায়ের পূজা হয় এবং দশমীর দিন পুষ্পাঞ্জলি গ্রহন করে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শারদীয়া দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। এই বিজয়াদশমী উপলক্ষে অনেক জায়গায় মেলার আয়োজন করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নতুন পোশাক পরে একে অপরের সাথে কোলাকুলি, প্রণাম, আশীর্বাদ ইত্যাদির মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
মা দুর্গার বিভিন্ন নাম
দুর্গা পৌরাণিক দেবতা।তাঁকে আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা, সিংহবাহনা ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়।দুর্গ বা দুর্গম নামক দৈত্যকে বধ করেন বলে তাঁর নাম হয় দুর্গা। জীবের দুর্গতি নাশ করেন বলেও তাঁকে দুর্গা বলা হয়। ব্রহ্মার বরে পুরুষের অবধ্য মহিষাসুর নামে এক দানব স্বর্গরাজ্য দখল করলে রাজ্যহারা দেবতারা বিষ্ণুর শরণাপন্ন হন। বিষ্ণুর নির্দেশে সকল দেবতার তেজঃপুঞ্জ থেকে যে দেবীর জন্ম হয় তিনিই দুর্গা। দেবতাদের শক্তিতে শক্তিময়ী এবং বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিতা হয়ে এ দেবী যুদ্ধে মহিষাসুরকে বধ করেন। তাই দেবীর আর এক নাম মহিষমর্দিনী। কালীবিলাসতন্ত্র, কালিকাপুরাণ, দেবীভাগবত, মহাভাগবত, বৃহন্নন্দিকেশ্বরপুরাণ, দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী, দুর্গোৎসববিবেক, দুর্গোৎসবতত্ত্ব প্রভৃতি গ্রন্থে দেবী দুর্গা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে।
মা দুর্গার অকালবোধন
শারদীয়া দুর্গাপূজাকে “অকালবোধন” বলা হয়। কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে মা দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই সময়টি তাঁদের পূজা যথাযথ সময় নয়। অকালের পূজা বলে তাই এই পূজার নাম হয় “অকালবোধন”। এই দুই পুরাণ অনুসারে, রামকে সাহায্য করার জন্য ব্রহ্মা দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন। কৃত্তিবাস ওঝা তাঁর রামায়ণে লিখেছেন, রাম স্বয়ং দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন।
দেবতাদের দূর্গাপূজা
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে কৃষ্ণকে দূর্গাপূজার প্রবর্তক বলা হয়। এখানে বলা হয় সৃষ্টির প্রথমে কৃষ্ণ বৈকুন্ঠে প্রথম দূর্গাপুজা করেন। এরপর ব্রহ্মা মধু ও কৈটভ নামে দুই অসুর বধের জন্য দ্বিতীয় দুর্গাপূজা করেছিলেন। শিব ত্রিপুর নামে এক অসুরকে বধ করার তৃতীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। ইন্দ্র দুর্বাসা মুনির অভিশাপে লক্ষীকে হারিয়ে চতুর্থ দুর্গাপুজা করেন। এরপর থেকে মর্তলোকে দুর্গাপূজা করা হচ্ছে। শাক্তধর্মের ধর্মগ্রন্থ দেবীভাগবত পুরাণ বর্ণিত আছে ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু ক্ষীরোদসাগরের তীরে দূর্গার মাটির মুর্তি তৈরী করে পূজা করেন। দেবী দুর্গা সন্তুষ্ট হয়ে মনুকে সন্তান লাভের বর দেন এবং তার রাজ্যশাসনের পথ পরিষ্কার করেন। শ্রীশ্রীচন্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম-এ দুর্গা ও দুর্গাপুজাকে কেন্দ্র্র করে কয়েকটি পৌরানিক গল্প প্রচলিত আছে। প্রত্যেকটি গল্পে দুর্গাই কেন্দ্রীয় চরিত্র। গল্পগুলি রাজা সুরথের গল্প, মধুকৈটভের গল্প, মহিষাসুরের গল্প। এ তিনটি গল্পের মধ্যে মূলত: মহিষাসুর বধ কাহিনীটি জনপ্রিয়। এখানে মহিষাসুর যুদ্ধ করে দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নেয়। বিষ্ণু, শিব এ কারণে ক্রোধান্বিত হলে তাদের মুখমন্ডল থেকে যে মহাতেজ নির্গত হয় তা হিমালয়ে ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে একত্রিত হয়ে নারীমূর্তির সৃষ্টি হয় যা কাত্যায়নী পূজা নামে অভিহিত হয়। “মূর্তিতত্ত্ব” বাংলায় দেবী দুর্গার যে মূর্তিটি সচরাচর দেখা যায় সেটি পরিবারসমন্বিতা বা সপরিবার দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মধ্যস্থলে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী, তাঁর পদতলে ত্রিশুলবিদ্ধ মহিষাসুর, মুকুটের উপরে শিবের ছোট মুখ, দেবীর ডানপাশে উপরে দেবী লক্ষ্মী ও নিচে গণেশ, বামপাশে উপরে দেবী সরস্বতী ও নিচে কার্তিক। কলকাতায় সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার ১৬১০ সালে এই সপরিবার দুর্গার প্রচলন করেন । তাঁরা কার্তিকের রূপ দেন জমিদারপুত্রের, যা তৎপূর্ব ছিল সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের আদলে যুদ্ধের দেবতা রূপে । এছাড়াও বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর সংলগ্ন অঞ্চলে দেবী দুর্গা এক বিশেষ মূর্তি দেখা যায়। সেখানে দেবীর ডানপাশে উপরে গণেশ ও নিচে লক্ষ্মী, বামে উপরে কার্তিক ও নিচে সরস্বতী এবং কাঠামোর উপরে নন্দী-ভৃঙ্গীসহ বৃষভবাহন শিব ও দুইপাশে দেবীর দুই সখী জয়া ও বিজয়া অবস্থান করেন।
মা দুর্গার দশটি হাতের নয়টি অস্ত্রের মাহাত্ম্য
শঙ্খ :- সৃষ্টির প্রতীক এই শঙ্খ। পুরাণ মতে, শঙ্খের থেকে যে শব্দের উৎপত্তি হয় তার থেকেই জীব জগতের সমস্ত প্রাণের সৃষ্টি।
চক্র :- মা দুর্গার হাতে ঘোরে চক্র। এর অর্থ হল সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রে রয়েছেন দেবী দুর্গা। এবং তাঁকে কেন্দ্র করে সমস্ত বিশ্ব আবর্তিত হচ্ছে।
দণ্ড বা গদা :- দণ্ড আনুগত্য, ভালবাসা এবং ভক্তির প্রতীক।
পদ্ম :- দেবীর হাতের পদ্ম সমাজকে অসাধারণ একটি বার্তা দেয়। পাঁকের মধ্যে জন্মায় পদ্ম। কিন্তু তবু সে কত সুন্দর। তেমনই মায়ের আশীর্বাদে যেন অসুরকূলও তাঁর ভিতরের অন্ধকার থেকে যে মুক্ত হয়, এই বার্তাই দেয় পদ্ম ফুল।
তলোয়ার :- তলোয়ারের ধার যেন আসলে মানুষের বুদ্ধির ধার। এই ধার দিয়ে যেন সমাজের সমস্ত বৈষম্য এবং নেগিটিভিটিকে মানুষ জয় করতে পারে, সেই বার্তাই বহন করে দেবীর হাতের খোলা তলোয়ার।
ত্রিশূল :- ত্রিশূলের তিনটি তীক্ষ্ণ ফলার তিনটি আলাদা আলাদা অর্থ রয়েছে। মানুষ তিনটি গুণ বা ত্রিগুণার সমন্বয়ে তৈরি। তম, রজ অর্থাৎ এবং সত্য। ত্রিশূলের তিনটি ফলা এই তিনটি গুণকেই নির্দেশ করে।
তীর-ধনুক :- শক্তির চিহ্ন এই তীর-ধনুক। তীর পোটেনশিয়াল এনার্জির চিহ্ন। আর ধনুক কাইনেটিক এনার্জির চিহ্ন।
অশনি :- মায়ের হাতের অশনি দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক। এই দু’টি গুণেই মানুষ জীবনে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
সাপ :- চেতনার নিম্ন স্তরে থেকে উচ্চ স্তরে প্রবেশ এবং বিশুদ্ধ চেতনার চিহ্ন এই সাপ।
দুর্গা হিন্দু শাস্ত্রে ‘দুর্গা’ নামটির ব্যাখ্যা নিম্নোক্তরূপে প্রদত্ত হয়েছে :
দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিত”
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত”
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচক”
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত”
– ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, উ-কার বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও অ-কার ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে, “দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা” – অর্থাৎ, দুর্গ নামক অসুরকে যিনি বধ করেন তিনিই নিত্য দুর্গা নামে অভিহিতা। আবার শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে এই দেবীই ‘নিঃশেষদেবগণশক্তিসমূহমূর্ত্যাঃ’ বা সকল দেবতার সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি।
দুর্গার বাহন সিংহ
শ্রীশ্রীচণ্ডী-তে সিংহকে “মহাসিংহ”, “বাহনকেশরী”, “ধূতসট” ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে। দুর্গাপূজার সময় সিংহকেও বিশেষভাবে পূজা করা হয়। মহিষাসুর মহিষাসুর অসুর, অর্থাৎ দেবদ্রোহী। তাই দেবীপ্রতিমায় দেবীর পদতলে দলিত এই অসুর ‘সু’ এবং ‘কু’-এর মধ্যকার চিরকালীন দ্বন্দে অশুভ শক্তির উপর শুভশক্তির বিজয়ের প্রতীক।
মহিষাসুর অসুর হলেও দুর্গোৎসবে মহিষাসুরেরও পূজা হয়-
কালিকা পুরাণ অনুসারে, মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে নিজের মৃত্যুদৃশ্য স্বপ্নে দেখে ভীতস্থ মহিষাসুর ভদ্রকালীকে সাধনায় তুষ্ট করেছিলেন। ভদ্রকালী তাঁকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি না দিলেও তাঁর ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে বরদান করতে ইচ্ছুক হন। মহিষাসুর দেবতাদের যজ্ঞভাগ বর চাইলে দেবী সেই বর দিতে অস্বীকৃত হন, কিন্তু মহিষাসুরকে এই বর দেন যে যেখানেই দেবী পূজিতা হবেন, সেখানেই তাঁর চরণতলে মহিষাসুরেরও পূজিত হবে।
গণেশ কার্যসিদ্ধির দেবতা
হিন্দু পুরাণের নিয়ম অনুসারে, অন্যান্য দেবতার আগে গণেশের পূজা করতে হয়। গণেশের পূজা আগে না করে অন্য কোনো দেবতার পূজা করা শাস্ত্রে নিষিদ্ধ। গণেশের বাহন মূষিক বা ইঁদুর। ইঁদুর মায়া ও অষ্টপাশ ছেদনের প্রতীক। “লক্ষ্মী” লক্ষ্মী শ্রী, সমৃদ্ধি, বিকাশ ও অভ্যুদয়ের প্রতীক। শুধু ধনৈশ্বর্যই নয়, লক্ষ্মী চরিত্রধনেরও প্রতীক। লক্ষ্মীর বাহন পেচক বা প্যাঁচা। “সরস্বতী”সরস্বতী বাণীরূপিণী বাগদেবী, তিনি জ্ঞানশক্তির প্রতীক। দেবীর হাতে পুস্তক ও বীণা। পুস্তক বেদ শব্দব্রহ্ম। বীণা সুরছন্দের প্রতীক নাদব্রহ্ম। শুদ্ধ সত্ত্বগুণের পূর্তি, তাই সর্বশুক্লা। শ্বেতবর্ণটি প্রকাশাত্মক। সরস্বতী শুদ্ধ জ্ঞানময়ী প্রকাশস্বরূপা। জ্ঞানের সাধক হইতে হইলে সাধককে হইতে হইবে দেহে মনে প্রাণে শুভ্র-শুচি। সরস্বতীর বাহন হংস। হংস হিন্দুদের নিকট একটি পবিত্র প্রতীক। “কার্তিক” দেবসেনাপতি কার্তিক সৌন্দর্য ও শৌর্যবীর্যের প্রতীক। যুদ্ধে শৌর্য-বীর্য প্রদর্শন একান্ত প্রয়োজনীয়। তাই সাধক-জীবনে এবং ব্যবহারিক জীবনে কার্তিককে প্রসন্ন করতে পারলে শৌর্য-বীর্য আমাদের করতলগত হয়। কার্তিকেয়ের বাহন ময়ূর। সৌন্দর্য ও শৌর্য – কার্তিকের এই দুই বৈশিষ্ট্যই তাঁর বাহন ময়ূরের মধ্যে বিদ্যমান।
পূজা মন্ত্র দূর্গা পূজার মন্ত্র গুলি সাধারণত শ্রী শ্রী চণ্ডি থেকে পাঠ করা হয়। ঢাক-ঢোল, খোল করতাল, সুগন্ধী আগর বাতি তার সাথে এই সংস্কৃত মন্ত্রগুলি এক পবিত্র পরিবেশের জন্ম দেয়।
দূর্গা পুষ্পাঞ্জলি দেয়ার মন্ত্র
ঔঁ জয়ন্তি মঙ্গলা কালী, ভদ্র কালী কপালিনী, দূর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী, স্বাহা স্বধা নমস্তুতে। এস স্ব চন্দন পুষ্প বিল্ব পত্রাঞ্জলী নম ভগবতী দূর্গা দেবী নমহ্।
দূর্গাদেবীর প্রণাম মন্ত্র
সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে, শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরি নারায়নী নমস্তুতে।
অর্থ: হে দেবী সর্বমঙ্গলা, শিবা, সকল কার্য সাধিকা, শরণযোগ্য, গৌরি ত্রিনয়ণী, নারায়নী তোমাকে নমস্কার।